কুরবানির ফজিলত!

কুরবানির ফজিলত!

কুরবানি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কুরবানি শব্দটি আরবি। কুরবানির শাব্দিক অর্থ হচ্ছে নৈকট্য, সান্নিধ্য, আত্মত্যাগ, জবেহ, রক্তপাত ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় কুরবানি করা হয় মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের আশায়। কুরবানি হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় নির্ধারিত দিনে হালাল পশু আল্লাহর নামে জবেহ করা।

কুরবানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেনঃ নিশ্চয়ই আমার কাছে কুরবানির পশুর গোশত ও রক্ত কিছুই পৌছে না, তবে আমার কাছে পৌছে একমাত্র তাকওয়া। (সুরা হজ্ব : ৩৭)
একবার হযরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) রাসুলে পাক (সা.) এর নিকট জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লহর রাসুল (সা.) কুরবানি কি? তখন রাসুল (সা.) উত্তর দিলেনঃ কুরবানি হচ্ছে তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনাদর্শ। তখন সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন হে রাসুল (সা.) কুরবানির ফজিলত কি? রাসুল (সা.) আবার উত্তর দিলেনঃ পশুর পশমের পরিবর্তে একেকটি করে সওয়াব দেওয়া হয়। (মেশকাত : ১২৯)
নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেনঃ কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই কুরবানি দাতার কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায় এবং তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (তিরমিজি ; ১/১৮০)
আমরা সকলেই চেষ্টা করবো আল্লাহর নামে কুরবানি করার। যাদের সামর্থ আছে তারা অবশ্যই পবিত্র ঈদুল আযহার সময় হালাল পশু কুরবানি করবো। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে কুরবানি দেওয়ার তৌফিক দান করুক। আমিন।

যাদের উপর কুরবানি ওয়াজিবঃ
ঈদুল আযহার দিন প্রয়োজনীয় খরচ ব্যতীত সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা সমপরিমাণ সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানি ওয়াজিব। কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ মাল পূর্ণ ১ বছর থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই বরং শেষ দিন সূর্যাস্তের আগেও যদি কেউ নেসাব পরিমাণের মালিক হয়, তাহলে তার উপরও কুরবানি ওয়াজিব। একই পরিবারের পৃথক পৃথক সদস্য আলাদাভাবে নেসাব পরিমাণের সম্পদের মালিক হয়ে থাকলে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কুরবানি ওয়াজিব। জীবন জীবীকার জন্য যতটকু জমি দরকার তার অতিরিক্ত জমি অথবা ফসল নেসাব পরিমাণ হলেও কুরবানি তার উপর ওয়াজিব। অতএব, প্রত্যেক মুক্ত, ধনী, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক নর-নারীর উপর কুরবানি ওয়াজিব।

কুরবানির পশু ও তার বয়সঃ
ইসলামী শরিয়তে গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা কুরবানি করাকে বৈধতা দান করেছে। তবে ছাগল, দুম্বা, ভেড়া একজন এর পক্ষ থেকে কুরবানি করতে হবে। মহিষ-গরু, উট সাতজন পর্যন্ত শরীক হয়ে কুরবানি করতে পারবে। তবে শরীক কুরবানির ক্ষেত্রে শর্ত একটাই যে অবশ্যই সবার নিয়ত শুদ্ধ থাকতে হবে। শরীকদের মধ্যে কারো যদি কুরবানির নিয়ত থাকে লোক দেখানো বা গোশত খাওয়ার তাহলে কারো কুরবানি কবুল হবে না।
কুরবানি করার ক্ষেত্রে পশুর বয়স অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক বছরের হতে হবে। তবে দুম্বা ও ভেড়া ৬ মাসের হলেও যদি দেখতে ১ বছরের মত মোটা তাজা হয় তাহলে কুরবানি করা যাবে। ছাগল যত বড় হোক না কেন ১ বছরের ১ দিন কম হলেও কুরবানি হবে না।
গাভি, মহিষ ২ বছরের হতে হবে। ১ দিন কম হলেও কুরবানি হবে না।
উট ৫ বছরের হতে হবে। ১ দিন কম হলেও কুরবানি হবে না।
কুরবানির জন্য পশু মোটা, তাজা ও সুস্থ হতে হবে।
অসুস্থ, কানকাটা, লেজকাটা, লেংড়া, কানা দুর্বল পশু দিয়ে কুরবানি করলে বিশুদ্ধ হবে না।

কুরবানির দিন ও সময়ঃ
কুরবানির করার সঠিক দিন হচ্ছে ১০, ১১, ১২ জিলহজ্ব। এই ৩ দিনের মধ্যে যে কোন দিন কুরবানি করা জায়েজ আছে। তবে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে ১০ জিলহজ্ব অর্থাৎ ঈদের দিন।
অবশ্যই ঈদের নামাজের পরে কুরবানি করতে হবে। নামাজের আগে কুরবানি করা যাবে না। একটি শহরে বিভিন্ন সময়ে নামাজ হলে সে ক্ষেত্রে যে কোন এক জায়গার নামাজ হলেই সমস্ত শহরে কুরবানি করতে পারবে। তবে মনে রাখতে হবে সূর্যাস্তের পূর্বেই পশু কুরবানি করতে হবে।

কুরবানির গোশতঃ
কুরবানির গোশত নিজে খাওয়া এবং গরীবদেরকে খাওয়ানো। কুরবানির গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা হচ্ছে ৩ ভাগে ভাগ করা। নিজেদের জন্য, গরীবদের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের জন্য।

কুরবানির চামড়াঃ
কুরবানি করা পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করা যাবে অথবা কাউকে হাদিয়া দিতে পারবে। মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ডেও দান করা যাবে। তবে কোনভাবেই কুরবানির চামড়া বিক্রি করা যাবে না। সবচেয়ে ভালো হয় মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ডে দান করলে।

আমরা কুরবানি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক নিয়মগুলো জেনে তারপর কুরবানি দিবো। মনে রাখতে হবে কুরবানি করার উদ্দ্যেশ্য হছে মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য এবং সন্তুষ্টি লাভ করা। পশু কুরবানি করার মাধ্যমে নিজের বিগত দিনের গুনাহ মাফ করা। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *